বিরল গণসংবর্ধনার জবাবে ডিসি কামাল হোসেন

কক্সবাজারের মানুষের সমর্থন ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব হতো না

বিশেষ প্রতিবেদক :

বিরল সংবর্ধনায় সিক্ত হলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। তাঁর সময়েই বিশ^ব্যাপী বহুল আলোাচিত রোহিঙ্গা নির্যাতন সংঘটিত হয় পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারে। ফলে রাষ্ট্রহারা এসব মানুষ দল বেঁধে ছুটে আসে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশে।

দশ লক্ষাধিক মানুষকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বের ¯্রােতের টানের মতো আসা রোহিঙ্গাদের কারণে ঘটেনি অপ্রীতিকর কোন ঘটনা।
জেলায় বর্তমানে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থব্যয়ে এক ডজনের অধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় দেখভালের দায়িত্বও সুচারুভাবে পালন করে চলেছেন ডিসি মোঃ কামাল হোসেন।

এতো ব্যস্ততার মধ্যেও মাত্র দুই মাসের মধ্যে কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামে শহরে একটি কলেজ স্থাপনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এসব অবদানের জন্য জেলাবাসীর অন্তরে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। রাষ্ট্র সেই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে জনপ্রশাসন পদক ২০১৯। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সেই পদক গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার জেলাবাসীর পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনার জবাবে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এর পুরো কৃতিত্বই কক্সবাজার বাসীকে দিয়ে বললেন, রাষ্ট্রের একজন কর্মচারি হিসেবে তিনি কোন ধরনের সংবর্ধনা গ্রহণ করতে পারেন না। কক্সবাজারের মানুষ যদি সমর্থন না দিতো, রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় না দিতো এবং উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা না করতো তাহলে এই পুরস্কার পাওয়া সম্ভব হতো না।

সংবর্ধনার জবাবে তিনি বলেন, আজ ভালো বললেও, দুই একদিন পর কোথাও গ-গোল দেখা দিলে সবাই তখন খারাপ বলবে। সকল সমস্যা রাতারাতি দূর হয়না। তবে, সমস্যা যতোটা সম্ভব লাঘব করার জন্যই আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ (এসডিজি) বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। সে জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জনপ্রশাসন পদক ২০১৯ প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে কক্সবাজার বাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয় জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনকে।
গতকাল ৩০ জুলাই বিকেলে শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অডিটরিয়ামে আনন্দ সমাবেশ উদ্যাপন পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার সভাপতিত্বে ও এম. এ. মঞ্জুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আনন্দ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিক এবং সংসদ-সদস্য জাফর আলম { বি.এ (অনার্স) এম.এ}।

সভামঞ্চে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য এ থিন রাখাইন (অধ্যাপিকা), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফছার,অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং শাজাহান আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আমিন আল পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আনন্দ সভায় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল ভৌমিক, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং, বিশিস্ট মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজারের জ্যেষ্ট সাংবাদিক ও কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার তোফায়েল আহমদ, জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিপঙ্কর বড়–য়া পিন্টু, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রনজিত দাশ, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, জেলা জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, প্রেস ক্লাব সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়–য়া অপু, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজিবুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদিকা তাহমিনা চৌধুরী লুনা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্র সেটি নিশ্চিত করেছে। পুরস্কার পাওয়ার পর কামাল হোসেনের কাছে আমাদের দাবির চাপ আরো বাড়বে।
সংসদ-সদস্য জাফর আলম বলেন, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের মতো গুণী মানুষকে সংবর্ধনা দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা কক্সবাজারবাসী গুণী জাতিতে পরিণত হলাম। তিনি আমাদের ধন্য করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। কক্সবাজারবাসী ধন্য কামাল হোসেনের মতো যোগ্য একজন প্রশাসক এখানে কাজ করছেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসকের যোগ্য নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের কারণে জনপ্রশাসন পদক ২০১৯ পেয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সবার স্মরণিয় অবদানের কারণেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জনপ্রশাসন পদক ২০১৯ পেয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সেবা না পেয়ে যেনো মানুষ ঘরে ফিরে না যায় সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভারগ্রহণ করেছেন। এ জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেয়া প্রয়োজন।

মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানব সেবার লক্ষ্যে যে প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়ন হতে চলেছে বলেই কক্সবাজার জেলাপ্রশাসন জনপ্রশাসন পদক ২০১৯ পেয়েছে। কক্সবাজার শহরে বর্জ্য এবং পানির যে সমস্যা রয়েছে সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজার পৌরসভাকে ৪ টি গাড়ি দিয়েছে। পৌরবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ট সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ বলেন, জাতীয় বাজেটের সমান উন্নয়ন কাজ কক্সবাজারে পরিচারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রুপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ এর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা বাস্তবায়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সভাশেষে রং তুলি দিয়ে অঙ্কিত জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের একটি প্রতিকৃতি ও সম্মাননা স্মারক (ক্রেস্ট) তাঁর হাতে তুলে দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উদ্যাপন পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব এবং কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ্ রফিক এবং সংসদ-সদস্য জাফর আলম {বিএ (অনার্স) এম.এ}।

এরপর জেলা আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ, জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা জাসদ,পরিবহণ শ্রমিক লীগ, ৩ নং ওয়ার্ড সমাজ পরিচালনা কমিটি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, জেলা ওলামা লীগ, যুব মহিলা লীগ, টুয়াক এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।